ঈমানের অন্যতম শর্ত হলো, পুনরুত্থানে বিশ্বাস করা। মহান আল্লাহ মৃত্যুর পর আমাদের আবার পুনরুত্থিত করবেন। যদি কেউ তা অস্বীকার করে, তবে তার ঈমান থাকবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন, তারপর তিনি এটাকে সৃষ্টি করবেন পুনর্বার; এটা তাঁর জন্য অতি সহজ। ’ (সুরা : আর রুম, আয়াত : ২৭)
মহান আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বশক্তিমান। কোনো কিছুই তাঁর সাধ্যের বাইরে নেই। প্রশ্ন হতে পারে মানুষের মৃত্যুর পর তো তাঁর শরীর পচে যায়, হাড়গোড় নষ্ট হয়ে যায়, কেউ আবার ছাই হয়ে সমুদ্রে মিশে কিংবা বাতাসে মিশে যায়, এদের মহান আল্লাহ কিভাবে পুনরুত্থিত করবেন! এ প্রশ্নের জবাবে মহান আল্লাহ বলেন, মানুষ কি মনে করে যে আমি তার হাড়গুলো একত্র করতে পারব না? হ্যাঁ, অবশ্যই আমি তা পারব; বরং আমি তার আঙুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত আবারও যথাযথভাবে ঠিক করতে সক্ষম। (সুরা : কিয়ামাহ, আয়াত : ৩-৪)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের আঙুলের ছাপসহ যথাযথভাবে পুনরুত্থিত করবেন। আঙুলের ছাপ মানবদেহের এমন গুরুত্বপূর্ণ সূক্ষ্ম অংশ যে এই অংশ দিয়ে মানুষের আইডেন্টিটি যাচাই করা হয়। ১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডে স্যার ফ্রান্সিস গোল্ট আবিষ্কার করেন, পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যার আঙুলের ছাপ অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে হুবহু মিলে যাবে। প্রত্যেক মানুষকে শনাক্ত করার জন্য তার আঙুলের ছাপই যথেষ্ট। এ ছাড়া মানুষের আঙুলের ছাপ থেকে বিভিন্ন আণবিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার জীবনযাত্রা সম্পর্কে, তার বসবাসরত পরিবেশ সম্পর্কে, তার কাজ, খাওয়ার অভ্যাস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা থাকলে সেগুলোও জানতে পারা যায়।
মহান আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর আশা পূরণের জন্যও মৃতকে জীবিত করে দেখিয়েছিলেন। যেন তার হৃদয় প্রশান্ত হয় এবং পরকালের ব্যাপারে মানবজাতির বিশ্বাস দৃঢ়তর হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন ইবরাহিম বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে দেখান, কিভাবে আপনি মৃতদের জীবিত করেন। তিনি বলেন, তুমি কি বিশ্বাস করনি?’ সে বলল, ‘অবশ্যই (বিশ্বাস করি); কিন্তু আমার অন্তর যাতে প্রশান্ত হয়। ’ তিনি বলেন, ‘তাহলে তুমি চারটি পাখি নাও। তারপর সেগুলোকে তোমার প্রতি পোষ মানাও। অতঃপর প্রতিটি পাহাড়ে সেগুলোর টুকরা অংশ রেখে আসো। তারপর সেগুলোকে ডাকো, সেগুলো দৌড়ে আসবে তোমার কাছে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬০)
কোরআনের ব্যাখ্যাকাররা বলেন, ইবরাহিম (আ.) চারটি পাখিকে এমনভাবে পোষ মানান যে সেগুলোকে ডাকলেই তাঁর কাছে চলে আসত, এবং তিনি প্রত্যেকটিকে ভালোভাবে চিনতেন। এরপর আল্লাহর আদেশে পাখিগুলোকে জবাই করে সেগুলোর হাড়-মাংস, পাখা ইত্যাদিকে কিমায় পরিণত করে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে নিজের পছন্দমতো কয়েকটি পাহাড়ে একেকটি ভাগ রেখে আসেন। তারপর তাদের যখন ডাকলেন, সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের সঙ্গে হাড়, পাখার সঙ্গে পাখা, গোশতের সঙ্গে গোশত, রক্তের সঙ্গে রক্ত মিলে পূর্বের রূপ ধারণ করে এবং তাঁর কাছে উড়ে এসে উপস্থিত হয়। (তাফসিরে কুরতুবি)
রাসুল (সা.)-এর যুগে মুনাফিকরা পুনরুত্থান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলে আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ কি দেখে না যে আমরা তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে? অথচ পরে সে হয়ে পড়ে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী। আর সে আমার উদ্দেশ্যে উপমা পেশ করে, অথচ সে তার নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে, হাড়গুলো জরাজীর্ণ হওয়া অবস্থায় কে সেগুলো জীবিত করবে? বলুন, তাতে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই, যিনি তা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। ’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ৭৭-৭৯)
উল্লিখিত আয়াতগুলো একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়েছে। ঘটনাটি এই যে আস ইবনে ওয়ায়েল মক্কা উপত্যকা থেকে একটি পুরনো হাড় কুড়িয়ে তাকে স্বহস্তে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলল, এই যে হাড়টি চূর্ণবিচূর্ণ অবস্থায় দেখছেন, আল্লাহ তাআলা একেও জীবিত করবেন কি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলা তোমাকে মৃত্যু দেবেন, পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং জাহান্নামে দাখিল করবেন। ’ (মুস্তাদরাক : ২/৪২৯)
পাঠকের মতামত